সিলেট: করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত। আর এ সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নেয়া হয়েছে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা। এতে কিছুটা ছন্দপতন হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। করোনার ধাক্কা লেগেছে দেশের আমদানি-রপ্তানি, পর্যটন খাতসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। সীমিত হয়ে গেছে বিমান যোগাযোগ।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিজাত বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামালের সিংহভাগ আমদানি করা হয় চীন থেকে। বর্তমানে এসব কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হওয়ায় পূর্বের আমদানি করা মজুদ থেকে এখন চলছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সুত্রে জানা গেছে, চীন থেকে পণ্যের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, শিল্পের মেশিনারিজ, তৈরি পণ্য আমদানি হয়ে থাকে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে চাল ও ফলের বাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। চাল, রসুন ও আদার বাজারেও চড়াভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে ১০টি আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশ বিমানের চলাচল। এই ভাইরাসের কারণে ভাটা পড়েছে দেশের পর্যটন খাত। এতে করে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে এক মাস আগেও রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো। এই আতঙ্কে ক্রেতা সংকটে পড়েছে নগরীর বিপনী বিতানগুলো। অতি প্রয়োজন ছাড়া বিপনীবিতানে যাচ্ছেন না ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। এতে বেচাকেনা কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা। বিপনী বিতান ঘুরে দেখা গেছে, নামীধামী শো-রুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে বাহারি পোশাকের সমাহার। তবে কর্মব্যস্ততা নেই বিক্রয় প্রতিনিধিদের। এদিকে, করোনা আতঙ্কে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ খ্যাত পুণ্যভ‚মি সিলেটে এখন পর্যটক শূন্য। আর এর প্রভাব পড়েছে খাবারে হোটেল ও আবাসিক হোটেলগুলোতে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথেও। তাঁরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড় মাসে চীনের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। আগে আমদানি করা পণ্য ও কাঁচামালের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ দুই ক্ষেত্রেই তাঁরা ঝুঁঁকিতে রয়েছেন। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি। নতুন করে এলসি তো খোলা হচ্ছেই না, পূর্বে এলসি করা পণ্যের জাহাজীকরণও বন্ধ।
সিলেটের ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আবু জাফর জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট সবসময় ট্রাভেলস ব্যবসা ছিলো রমরমা। আগে প্রতিদিন অনেক টিকিট পাওয়া যেতো। কিন্তুু করোনাভাইরাসের প্রভাবে বর্তমানে ট্রাভেল ব্যবসায় চরম মন্দা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ ফ্লাইট সীমিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সিলেট ট্যুরিজম ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডাঃ আব্দুল হাই বলেন, এমনিতেই বিদেশি পর্যটক তুলনামূলক কম আসে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকে তাদের সফর বাতিল করছে। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশকে ও মানুষকে নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নেই। তবে হয়তো অন্যান্য দেশের পর্যটকরা নিশ্চিন্তে আসতে পারবে। কিন্তু এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।